আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে ৪৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ২ ডিসেম্বর রোববার যাচাই-বাছাই কালে সিলেট বিভাগের ১৭৭ জন প্রার্থীর মধ্যে সিলেট জেলার ১৫ জন, হবিগঞ্জ ১২ জন, সুনামগঞ্জ ১১ ও মৌলভীবাজারের ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। প্রার্থীরা আগামী তিনদনিরে মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।
সিলেট-১ (সিটি করপোরেশন-সদর) আসনে হলফনামায় সাক্ষর না থাকায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে ১ শতাংশ ভোটারের সাক্ষরের সত্যতা যাচাইয়ে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক সরদার, মুহিবুর রহমান, মোহাম্মদ আব্দুর রবের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ও মো. আব্দুল ওদুদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী কাইয়ুম চৌধুরীর এফিডেভিটে সাক্ষর না থাকায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ও জোনায়েদ মোহাম্মদ মিয়ার দেয়া ১ শতাংশ ভোটারের সাক্ষর জটিলতায় প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর) আসনে দলীয় মনোনয়নের ছাড়পত্র না থাকায় এবং এফিডেভিটে সাক্ষর না থাকায় জাতীয় পার্টির এম ইসমাইল আলীর মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছে।
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনসহ পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এই আসনে ৭ জনের মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সাংসদ সেলিম উদ্দিন (জাপা) ছাড়াও যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন এম এ মতিন (ইসলামী ঐক্যজোট), আহমদ আল ওয়ালী (স্বতন্ত্র), মাওলানা নুরুল আমিন (ইসলামী আন্দোলন), ফয়জুল মুনির চৌধুরী (স্বতন্ত্র)।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিনের ব্যাংক চালানের মূল কপি ও হলফনামায় সাক্ষর না থাকায় প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী এম এ মতিন চৌধুরীর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল মুনির চৌধুরীর হলফনামায় সাক্ষর না থাকায়, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. নুরুল আমীন বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় ঋণখোলাপি (ঋণের জামিনদার) এবং আহমদ আল ওয়ালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর ১ শতাংশ ভোটারের তালিকার সত্যতা না থাকায় প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে সিলেট-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ সেলিম উদ্দিন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও হলফনামায় সাক্ষর না থাকায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়ার ১ শতাংশ ভোটারের তথ্য সঠিক না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
মৌলভীবাজারের ৪টি আসনে ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
মৌলভীবাজার- ১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে ৬ প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী আয়করের রিটার্ন দাখিল না করায় ও জামায়াত ইসলাম সমর্থিত (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আমিনুল ইসলামের হলফনামায় সমর্থন তালিকা ঠিক না থাকার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) থেকে মোট ৮জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিবুল কাদির চৌধুরী ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়।
মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনে মোট ৯ প্রার্থীর মধ্যে বিএনএফএর আশা বিশ্বাস মামলার তথ্য গোপন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মুসাব্বিরের দেয়া তথ্যে গরমিল থাকার কারণে তাদের দুইজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পাঁচটি নির্বাচনী আসনে ১১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ৪০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে গণ্য হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-মধ্যনগর) আসনে কামরুজ্জামান কামরুল (বিএনপি) উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ না করা, একেএম ওহীদুল ইসলাম কবির (জাসদ) হলফনামার তথ্য না থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে জাতীয় পার্টির রুহুল আমীন প্রস্তাব ও সমর্থনকারী ভোটার না থাকায় মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনে সৈয়দ শাহ মুবশ্বির আলী (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ) হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় , আব্দুল ছত্তার (স্বতন্ত্র) বাংলাদেশ ভোটার নয়, রফিকুল ইসলাম খসরু (স্বতন্ত্র) ভোটারদের স্বাক্ষর না থাকায়, আশরাফুক হক সুমন (স্বতন্ত্র) হফলনামার তথ্য না থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে জয়নুল জাকেরীন (বিএনপি) ঋণ খেলাপী, মো. দিলোয়ার হোসেন (এনএনপি) বিদ্যুৎ বিল খেলাপী, মোহাম্মদ আজিজুল হক (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস) বিদ্যুৎ বিল খেলাপী , মো. রাজু আহমদ (স্বতন্ত্র) ভোটারদের স্বাক্ষর গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনে রনজিৎ কুমার দে (স্বতন্ত্র) ভোটারদের স্বাক্ষর গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
হবিগঞ্জের ৪টি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ৩৮ প্রার্থীর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ।
হবিগঞ্জ-১ হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে ১২ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ডিভিশনের ঋণ খেলাপি হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের (গণফোরাম) প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়। একই আসনে হলফনামা অসম্পূর্ণ ও স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংরিক্ষত নারী সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাখিলকৃত ১ শতাংশ সমর্থকের স্বাক্ষর সরেজমিন যাচাইকালে একজনের স্বাক্ষর সঠিক না পাওয়ায় অধ্যাপক মোঃ আব্দুল হান্নান মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এছাড়া হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপনের কারণে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন এর প্রার্থী আবু হানিফা আহমদ হোসেন এবং হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী জুবায়ের আহমেদ ও ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ বদরুর রেজার মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় বিএনপি প্রার্থী মোঃ জাকির হোসেনের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে ১০ প্রার্থীর মধ্যে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় বিএনপি প্রার্থী মোঃ জাকির হোসেনের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে ৯ প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মাওলানা আতাউর রহমান এবং দলীয় প্রার্থীতার চিঠি না থাকায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপি প্রার্থী মোঃ আব্দুল কাদিরের মনোনয়ন পত্র বাতিল কর হয়েছে।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর-শায়েস্তাগঞ্জ-লাখাই) আসনে ৯ প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মাওলানা আতাউর রহমান এবং দলীয় প্রার্থীতার চিঠি না থাকায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপি প্রার্থী মোঃ আব্দুল কাদিরের মনোনয়ন পত্র বাতিল কর হয়।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩ জনের। হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপনের কারণে জাকের পার্টির প্রার্থী মোঃ আনছারুল হকের মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়। সেই সাথে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী মৌলানা মহাম্মদ ছোলাইমান খান রাব্বানী এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর প্রার্থী মোহাম্মদ আঃ মমিনের মনোনয়ন পত্র বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো গত ২৮ নভেম্বর বুধবার। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ছিলো আজ ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।