রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে ফ্যাক্টর হবে ৮ লাখ ৪০ হাজার নতুন ভোটার
নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক



বিজ্ঞাপন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ৮ লাখ ৪০ হাজার ১৯২ জন নতুন ভোটার। এই বিশাল ভোটারকে নিজেদের পক্ষে টানতে নানা ধরনের কৌশল নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ২০১৪ সালে বর্জন করলেও এবার বিএনপির নেতৃবৃন্দ ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করছেন। উভয় দলের নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা বিষয় জুড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ তাদের জোটের প্রধান টার্গেট নতুন ভোটাররা।

প্রধান দুটি দলের নেতারা নতুন প্রজন্ম নিয়ে আশাবাদী। তাদের একই সুর, ‘নতুন প্রজন্ম সিন্ধু সেচে মুক্তা কুড়াতে জানে’। অর্থাৎ তারা বিচার বিশ্লেষণ করে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পায় না। তারা তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দেশের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কারো প্ররোচণায় কান দেবে না তরুণ ভোটাররা।

সিলেট সামাজিক ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি নিজাম উদ্দিন টিপু বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ ১০ বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন ভোটার হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট প্রদান করব।

স্বাভাবিকভাবে নতুন ভোটাররা উল্লসিত। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে ও সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগ করা গেলে নতুন ভোটাররাই পার্থক্য গড়ে দিবে।

সিলেট টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের জেনারেল ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সাবেক ছাত্র সৈয়দ মায়াজ আহমদ বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ নাগরিক অধিকার। নতুন প্রজন্ম জানে সত্য অনুসন্ধান। আমরা যারা নতুন ভোটার তারা দেশের কল্যাণ কামনা করি। আর যারাই দেশের জন্য প্রকৃতভাবে কাজ করতে পারবে, তাদের বাক্সেই পড়বে নতুনদের ভোট।

সিলেট উন্নয়ন সংস্থার প্রচার সম্পাদক জাহেদ আহমদ বলেন, নতুনরা দেশকে নিয়ে বেশি মাত্রায় স্বপ্ন দেখেন। বিভিন্ন মাধ্যমে দেশ নিয়ে, দেশের মানুষ নিয়ে নানা অপপ্রচার হয়। আমরা সত্য খুঁজতে চাই। কে কী বললো, তা আমলে না নিয়ে আমরা নতুন ভোটাররা নিজেদের বিবেক দিয়েই সত্য খুঁজে বের করব। কারণ আমাদের আমানত নিয়ে জাতীয় সংসদের দাঁড়িয়ে কেউ যেন অপব্যবহার করতে না পারে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহারের কাজ চলছে। অতীতের মতোই এবারো নতুন ভোটারদের নিয়ে পরিকল্পনা থাকবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি নতুন প্রজন্মকে নাড়া দিয়েছিল। তারা আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকেছে। সিলেটের ১৯ আসনে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ নতুন ভোটারদের টানতে বিভিন্ন কৌশল নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণদের নিয়ে কাজ করছেন। তাদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নানা দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

আসাদ উদ্দিন আরো বলেন, নতুন প্রজন্ম বিজ্ঞানমনষ্ক, আধুনিক ও জঙ্গিবাদবিরোধী। তারা সত্যের অনুসন্ধানী। আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। পাশাপাশি অতীতের সকল অপপ্রচার রুখে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার কাজ করে যাচ্ছে। এ সকল কারণে নতুন ভোটাররা আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকবে। কারণ নতুনরা তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগামী হওয়ায় নিজেরাই সত্য খুঁজে বের করতে পারে। নতুনেরা বিবেকসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কোনো ধরনের গোঁড়ামি তাদের ছুঁতে পারে না। তাই ইতিবাচক রাজনীতির জন্য নৌকা প্রতীকের দিকে নতুন ভোটাররা ঝুঁকবে বলে আশাবাদী তিনি।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, নতুন প্রজন্ম অনেক সচেতন। তারা সত্য অনুসন্ধানী। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আগের প্রজন্মের অনেকের চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে নতুন প্রজন্ম। তারা জানে দেশের প্রকৃত অবস্থা। এই যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি কিংবা দেশে চলে আসা হরিলুটের সকল খবর তাদের নখদর্পনে।

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে ধোকা দেওয়ার সুযোগ নাই। কারো অপপ্রচারে কান দেবে না নতুনেরা। তারা সত্য খুঁজে বের করতে পারদর্শী। তারা ক্রিস্টাল-ক্লিয়ার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেদের অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর। তাই দেশের প্রকৃত অবস্থা বিবেচনা করে নতুন প্রজন্ম দেশ উদ্ধারে ধানের শীষ প্রতীকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে বলে আশাবাদী তিনি।

নাসিম হোসাইন আরো বলেন, সিলেটের ১৯ আসনে নতুন ৮ লাখ ৪০ হাজার ভোটার পার্থক্য গড়ে দেবে। তারা চাকরিহীনতাসহ নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করি।

সিলেটের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে ও স্বতস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা গেলে নতুন ভোটাররাই পার্থক্য গড়ে দেবে। কারণ তারা নিজেরা যেমন সচেতন তেমনি আশপাশের লোজজনকেও সচেতন করে তুলতে পারে। সিলেট অঞ্চলের একজন নতুন ভোটার শুধু আরেকজনকে মোটিভেট করতে পারলে মোটিভেটেড ভোটারের সংখ্যা ১৫ লাখে দাঁড়াবে।

সুতরাং কেউই অপপ্রচার করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে সফল হতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলে আসছে। একদল বলছে, দেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি চলছে; অন্যদল বলছে, দেশে আগুন সন্ত্রাস কিংবা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা করছে প্রতিপক্ষ। কিন্তু নতুন ভোটারা এ সকল কথার বুলিতে আমল দেবে না। তারা আগুন সন্ত্রাসের বিপরীতে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের হিসাবও নেবে। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতসহ ব্যাংকের টাকা আত্মসাতসহ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তির বিষয়ও আমলে নিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে গত পাঁচ বছরে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৮ লাখ ৪০ হাজার ১৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭৫ এবং নারী ভোটার বেড়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩১৭ জন।

৪০টি উপজেলা, একটি সিটি করপোরেশন, ১৯টি পৌরসভা এবং ৩৩৮টি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসন।

সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯টি আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৬৬ লাখ ২০ হাজার ৬০৬। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৫ জন এবং নারী ভোটার ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ২০১ জন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ১৯ আসনে মোট ভোটার ছিল ৫৭ লাখ ৮০ হাজার ৪১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৫৩০ এবং নারী ভোটার ছিলেন ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮৪ জন।

সিলেটের একটি সিটি করপোরেশন, ১৩ উপজেলা, ৪ পৌরসভা ও ১০৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ২২ লাখ ৫২ হাজার ২৯৪ জন। এর মধ্যে ১১ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৪ পুরুষ এবং ১১ লাখ ৬৫০ জন নারী ভোটার রয়েছে। কয়েক বছরে সিলেটের ভোটার বেড়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ২৫৫ জন।

মৌলভীবাজারের চার আসন সাত উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৫ এবং নারী ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭৬ জন।

সুনামগঞ্জের ৪টি পৌরসভা ১১টি উপজেলার ৮৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৫টি সংসদীয় আসন। এখানে ভোটার সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ২২ হাজার ৬০৭ এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৭০ জন।

হবিগঞ্জে ৯ উপজেলার ৬টি পৌরসভা ও ৭৮ ইউনিয়ন নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন। এখানে ভোটার ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে ৭ লাখ ১০ হাজার ৩৫৯ পুরুষ ও ৭ লাখ ১৫ হাজার ২০৫ জন নারী ভোটার রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার। প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।