প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হলহলিয়া দুর্গ ও ব্রাহ্মণগাঁওয়ের গৌর গোবিন্দের রাজবাড়ি পুনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বছরের পুরনো রাজবাড়িটির অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য ফিরবে বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা।
১৪ নভেম্বর, বুধবার থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৯ সদস্যের একটি দল এ খননকাজ শুরু করে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের প্রচেষ্টায় দুই মাসব্যাপী পুনঃখননের কাজ চলবে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালকের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের দলে আছেন ঢাকা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম, কুমিল্লা ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান ড. আহমেদ আব্দুল্লাহ, সহকারী কাস্টোডিয়ান মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সিনিয়র ড্রাফটম্যান সিরাজুল ইসলাম, জালাল আহমেদ, আলোকচিত্রকর নুরুজ্জামান মিয়া, রেকর্ডার ওমর ফারুক পাটোয়ারী ও অফিস সহায়ক লক্ষণ দাস।
এর আগে ২০১৭ সালের ২০ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুজন শিক্ষক ও একদল শিক্ষার্থী গবেষক অধ্যাপক ড. অসিত বরণ পালের নেতৃত্বে এই হাওলি রাজবাড়ি সংরক্ষণ ও খননের লক্ষ্যে প্রাথমিক মাঠ জরিপ কার্য পরিচালনা করেছিলেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রথম দিনের খননকাজের মধ্য দিয়ে রাজবাড়ির সীমানা প্রাচীরের বেশ কিছু অংশ, রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার সফলভাবে খনন করে দৃশ্যমান পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।’
আতাউর রহমান আরও বলেন, ‘পুরো খননকাজ শেষ হলে পর্যটকরা অনায়াসে এ রাজ্যের ঐতিহ্যের নিদর্শন দর্শনের পাশাপাশি প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন বলে আশা করি।’
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়দল (উত্তর) ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামটি সুপ্রাচীনকালে লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল। লাউড় রাজ্যের সীমানা ছিল পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ, পূর্বে জৈন্তিয়া, উত্তরে কামরূপ সীমান্ত ও দক্ষিণে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন হাওলি প্রকৃতপক্ষে ছিল রাজবাড়ি। তৎকালীন রাজা বিজয় সিংহ প্রায় ১ হাজার ২০০ বছর আগে এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন।
বাড়িটি ৩০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তৎকালে নির্মিত রাজ বাড়িটিতে ছিল বন্দীশালা, সিংহদ্বার, নাচঘর, দরবার হল, পুকুর ও সীমানা প্রাচীর।