জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ:
দশ বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন তিনি। দলেরও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য। তবু নুরুল ইসলাম নাহিদকে এবার দলের ভেতরেই পড়তে হয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে।
সিলেট-৬ আসনে টানা ১০ বছর ধরে সাংসদের দায়িত্বে থাকা নাহিদের আসনে এবার মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের আরও ১২ নেতা। ফলে ভোটের লড়াইয়ে নামার আগে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে লড়াইয়ে নামতে হয়েছে নাহিদকে।
প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট -৬ আসন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা এডভোকেট মরহুম আবদুর রহিম । ১৯৭৯ সালে ২য় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মরহুম লুৎফর রহমান এ আসনে বিজয়ী হন। সেই থেকে প্রায় দেড় যুগ ধরে আসনটি বিএনপি, জাপা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে ছিল।
এরপর ১৯৯৬ সালে ৭ম সংসদ নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নাহিদের বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে এই আসনটি আওয়ামী লীগ ফিরে পায়। এরপর নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেও আবার ২০০১ সালে হাতছাড়া করে আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালে ৯ম সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর টানা প্রায় ১০ বছরে এ আসনটি আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দখলে।
এবার এ আসনে নাহিদসহ আওয়মী লীগের মনোনয়ন পত্র কিনেছেন ১৩জন নেতা। সকলেই এ আসনে প্রার্থী হতে চান। ফলে কে হবেন আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝি এনিয়ে সিলেট-৬ আসনের ভোটারদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত শুক্রবার ও শনিবার সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা চৌধুরী সালেহ আহমদ, লন্ডন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফছার খান সাদেক, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটির প্যানেল মেয়র ডেইজী সরওয়ার, নিউ জাস্ট স্টেইট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি সফিক উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সদস্য রুহুল আনাম মিন্টু, যুক্তরাজ্য সেচ্চাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সামসুল ইসলাম বাচ্চু, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগেরর প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলু, উপজেলা তাঁতীলীগের আহবায়ক হেলাল আহমদ চৌধুরী।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানমন্ডীর আওয়ামীলীগ কার্যালয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ ১৩জন মনোনয়ন জমা দেন। এদের মধ্যে কে পাচ্ছেন দলের টিকিট তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এ আসনে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৯০৩ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৫৬ জন এবং নারী এক লাখ ৮৮ হাজার ৪৭ জন।
উল্লেখ্য, ভোট পেছানো সংক্রান্ত বিভিন্ন জোটের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ নভেম্বর সোমবার নির্বাচনের তারিখের পুনঃতফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
পুনঃতফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।
এর আগে গত ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। তফসিল অনুসারে, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ ছিল ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ছিল ২২ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ করার কথা ছিল ২৩ ডিসেম্বর।