বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

আসছে কঠোর নীতিমালা: ইংলিশ না জানলে বৃটেনে নাগরিকত্ব মিলবেনা
ব্রেক্সিট পরবর্তী ইমিগ্রেশনে

ব্রেক্সিট পরবর্তী ইমিগ্রেশনে



বিজ্ঞাপন

তাইসির মাহমুদ:
ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বৃটেনবাসীর জন্য কঠোর ইমিগ্রেশন আইন অপেক্ষা করছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও হোম সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ ১ অক্টোবর সোমবার রাতে ব্রেক্সিট পরবর্তী নতুন ইমিগ্রেশন নীতিমালা প্রকাশ করেছেন।

০ইইউ, নন-ইইউ সব দেশের নাগরিকের জন্য অভিন্ন আইন
০লাইফ ইন দ্য ইউকের পরিবর্তে চালু হবে ‘বৃটিশ ভেলুজ টেস
০হাইলি স্কিলডদের অবাধ সুযোগ, কম দক্ষদের জন্য সীমিত
০ইংলিশে কথা বলতে জানে না ৭ লাখ বাসিন্দা

নতুন ইমিগ্রেশন নীতিমালায় ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমান লাইফ ইন দ্য ইউকে টেস্টের পরিবর্তে করা হয়েছে বৃটিশ ভ্যালুজ টেস্ট। এটি হবে কঠিন ইংলিশ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে কেউ যেমন বহির্বিশ্ব থেকে বৃটেনে প্রবেশ করতে পারবে না, তেমনি যারা বৃটিশ নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করবেন তারাও নাগরিকত্ব পাবেন না।

২ অক্টোবর মঙ্গলবার বৃটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্যা গার্ডিয়ানের প্রধান সম্পাদক ক্যাথরিন ভিনারকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে হোম সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ নতুন ইমিগ্রেশন পরিকল্পণার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তবে এই ইমিগ্রেশন নীতিমালার একটি শ্বেতপত্র চলতি বছরের শেষদিকে প্রকাশ করা হবে এবং আগামী বছরের শুরুতে পার্লামেন্টে বিল আকারে উপস্থাপন করা হবে। সংখ্যাগরিষ্ট এমপিদের ভোটে বিলটি পাস হলে আইনে পরিণত হবে। তবে যেহেতু আগামী বছরের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নের কথা তাই এর আগে পার্লামেন্টে উত্থাপন করার সম্ভাবনা কম।

সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ গার্ডিয়ানকে বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী বৃটেনের জন্য সরকার এমন কিছু ইমিগ্রেশন পলিসি প্রণয়ন করছে যার ফলে ইউরোপ থেকে মুক্ত চলাচলের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। ইউরোপিয়ান ও নন-ইউরোপিয়ান সকল দেশের নাগরিকদের জন্য হবে সমান আইন, থাকবে সমঅধিকার। দেশ বা অঞ্চল ভেদে কোনো বৈষম্য থাকবে না।

যোগ্যতার ভিত্তিতে অভিবাসীদের বৃটেনে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে, কোন দেশ থেকে কে আসছেন সেই বিবেচনায় নয়। তিনি বলেন, নতুন ইমিগ্রেশন আইনের কারণে তাঁর পিতাও যদি এদেশে আসতে না পারতেন তাহলে এ নিয়ে তাঁর কোনো অনুশোচনা থাকতো না। প্রসঙ্গ তিনি বলেন, তাঁর পিতা ১৯৬১ সালে ১ পাউন্ড পকেটে নিয়ে কোনো কর্মদক্ষতা ছাড়াই পাকিস্তান থেকে বৃটেনে এসেছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর পিতা যখন বৃটেনে এসেছিলেন তখন এখানকার ইমিগ্রেশন আইন অনেক সহজ ছিলো। কারণ তখন বৃটিশ সরকারের কমদক্ষ মানুষের প্রয়োজন ছিলো। হোম সেক্রেটারি বলেন, সুদক্ষ কর্মীদের জন্য বৃটেনের দরজা খোলা থাকবে, তবে কম-দক্ষদের জন্য সংকুচিত হয়ে যাবে প্রবেশের রাস্তা।

সাজিদ জাভিদ বলেন, নতুন ইমিগ্রেশন নীতিমালা প্রণয়ন করে তিনি বৃটেনের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ আশাবাদী। কারণ এতে করে বিশ্বের যেকোনো দেশের মানুষকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমানভাবে স্বাগত জানাতে পারবেন।

তিনি বর্তমান লাইফ ইন দ্যা ইউকে টেস্টকে পাব-কুইজ (মদ বারের প্রশ্ন) উল্লেখ করে বলেন, আমরা ইংলিশ টেস্টের মাধ্যমে মানুষের মধ্যকার পারস্পারিক সর্ম্পক উন্নয়নের চেষ্টা করছি। আমি আশাবাদী নতুন ইংলিশ টেস্ট চালু করার মধ্যদিয়ে মানুষের মধ্যকার পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দুর করতে পারবো। তিনি বলেন, মানুষের পারস্পারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভাষা না জানাটা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ প্রসংগে তিনি বলেন, বৃটেনে এখনও ৭ লাখ মানুষ ইংলিশে কথা বলতে জানে না।

তিনি বলেন, যারা বৃটেনে আসতে চান তাদের জন্য যে শুধু বৃটিশ ভ্যালুজ টেস্ট থাকবে তা নয়, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু আরো শক্তিশালী করা হবে এবং নতুন নাগরিকত্ব লাভের আবেদনেও তা প্রয়োগ করা হবে।

যেসব সুদক্ষ কর্মী ওয়ার্ক ভিসায় আসবেন তাদের জন্য নতুন ল্যাগুয়েজ টেস্ট প্রয়োজন হবে না, কারণ তাদের ল্যাগুয়েজ টেস্ট ওই ভিসা পদ্ধতির মধ্যে আছে। তবে বর্তমানে যে ২০ হাজার কর্মীর ক্যাপ আছে তা তুলে দেয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। সুদক্ষ কর্মী হিসেবে আবেদনকারীদের ন্যূনতম বেতন থাকতে হবে ৩০ হাজার পাউন্ড।

তিনি বলেন, গণভোটের কারণেই আমরা এখন ইমিগ্রেশন পলিসিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে পারছি। তিনি আরো বলেন, স্কিলড বেইজড সিঙ্গেল সিস্টেম বিশ্বের সব দেশের কর্মদক্ষ মেধাবীদের যুক্তরাজ্য আসার সুযোগ করে দেবে। এই পদ্ধতির ফলে মানুষকে তার যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। তাছাড়া অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে। অবাধ চলাচলও বন্ধ করা যাবে।

সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ ইংলিশ না জানা প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর মা বৃটেনে আসার ১০ বছর পরে ইংলিশ শিখেছেন। এছাড়াও তিনি জোরপুর্বক বিবাহ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেলে যেকোনো স্বামী-স্ত্রীর বৃটেনে প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করা হবে।