ভর্তির ক্ষেত্রে চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য দেশের বিশ্বিবিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো কোটা ব্যবস্থা চালু করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে করে ২০১৮-১৯ সেশন থেকে পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর চা-শ্রমিকদের সন্তানদের থেকে চারজন এ কোটায় ভর্তি হতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত চা সংশ্লিষ্টরা। প্রকৃতপক্ষে চা শ্রমিকরা সমাজের মূল জনগোষ্ঠী থেকে অবহেলিত ও বঞ্চিত। রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগে তারা বেশ খুশি।
২০১৮-১৯ সেশনের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘এ’ ও ‘বি’ ইউনিটে মোট ১৬০৩ আসনের মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হতে পারবে ১০০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ২৮, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/জাতিসত্ত্বা, হরিজন-দলিত ২৮, প্রতিবন্ধী ১৪, বিকেএসপি ৬, পোষ্য ২০ এবং চা শ্রমিক ৪ জন।
শাবিসহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে চা শ্রমিক সন্তানদের জন্য পৃথক ৫ শতাংশ কোটা দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছে ‘সিলেট চা জনগোষ্ঠী ছাত্র-যুব কল্যাণ পরিষদ’। একই দাবিতে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তারা।
সিলেট মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক আরাধন তালুকদার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নানা কারণে আমাদের সন্তানেরা নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে না। কোটার মাধ্যমে এরকম সুযোগ-সুবিধা দিলে আমাদের সন্তানেরা আরো ভালো কিছু করতে পারবে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শাবির ইংরেজী বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিনা রবি দাস বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চা শ্রমিক কোটা চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তের ফলে চা শ্রমিকের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী করে তুলবে।’
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও যেন এ পদ্ধতি চালু করে এবং পর্যাক্রমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এর সংখ্যা আরো বাড়াতে অভিমত দিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্ক প্রসেনজিৎ রূদ্র।
তিনি বলেন, ‘সমাজের মূল জনগোষ্ঠী থেকে চা শ্রমিকরা বছরের পর বছর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের জীবনমান উন্নয়নসহ শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কোটা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।’
অন্যদিকে প্রকৃতপক্ষে কোটা ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতে পারে কেবল বৈষম্যের শিকার হওয়া কিংবা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য-এমনটাই মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান ও বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘একটি জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে কোনো জাতি উন্নত করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল পিছিয়ে পড়া সকল জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়া। এবছর থেকে চা শ্রমিক সন্তানদের চারজন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পাবে। নি:সন্দেহে এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর সাথে সংশ্লিষ্ট উপাচার্য মহোদয়সহ সকলের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।’
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চায়ের দেশ সিলেটে সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী চা শ্রমিক। কিন্তু তাদের সন্তানেরা সুযোগের অভাবে উচ্চশিক্ষা থেকেও বঞ্চিত। তাই তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম এ উদ্যোগ নিয়েছি।’
কোটা সংস্কার চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে কেন এই উদ্যোগ- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যৌক্তিক যেকোনো দাবিকেই আমাদের বিবেচনা করতে হবে। পিছিয়ে পড়া যেকোন জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসা আমাদের রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।’