মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

পর্যটকদের নজর কাড়ছে ‘রাতারগুল’ খ্যাত জুড়ীর ‘জলার বন’



বিজ্ঞাপন

সাইফুল্লাহ হাসান :: উপরে নীল আকাশ আর নিচে স্বচ্ছ জলরাশি। এর মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে হিজল-করচসহ নানান জলজ গাছ। কখনও বা আকাশের কালো মেঘ হাওরের পানির সঙ্গে মিলেমিশে হয় একাকার। হাওরের জলে বয়ে চলেছে ছোট-বড় নৌকা। দৃশ্যটি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার খাকটেখা এলাকার।


সোয়াম্প ফরেস্ট বলতেই চোখে ভেসে ওঠে সিলেটের রাতারগুলের কথা। ঠিক রাতারগুলের মতোই জুড়ীর এই জায়গাটি। স্থানীয়ভাবে এটি জলার বন নামে পরিচিত, যা অবিকল রাতারগুলের মতো। এখানকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মন কাড়ছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের। তাই তো প্রতিনিয়ত এখানে ছুটে আসছেন তারা।

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মৌলভীবাজার জেলার সবক’টি পরিচিত পর্যটন স্পট বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সেই সুবাদে এখন পর্যটকদের নজর কেড়েছে রাতারগুল খ্যাত জুড়ীর খাকটেখা এলাকা। এই এলাকার অনেক জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হিজল আর করচ গাছ। গাছগুলো পানির মধ্যে ভাসমান। বর্ষার মৌসুমে জায়গাটি দেখতে অবিকল সিলেটের রাতারগুলের মতো। গাছগুলোতে বসে বিভিন্ন রকমের পাখির মেলা। সকাল থেকে বিকেল এলাকাটি মুখরিত হয় পাখির কিচিরমিচিরে।


জানা গেছে, গত মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় পর্যটকরা ঘুরতে আসছেন এখানে। অনেকে জায়গাটি উপভোগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পর্যটকরা এটির নাম দিয়েছেন ‘জুড়ীর রাতারগুল’।

পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের খাকটেখা নামক এলাকায় হিজল আর করচ গাছের অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন আসছেন শত শত মানুষ। সরেজমিনে খাকটেখা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে ইঞ্জিনচালিত ও ইঞ্জিন ছাড়া ছোট-বড় ডিঙি নৌকা। মাঝিরা অপেক্ষা করছেন পর্যটকদের আগমনের। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা গাড়ি রেখে দর কষাকষি করে সেসব নৌকায় উঠে হাওরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে আয়-রোজগার বেড়েছে স্থানীয় নৌকার মাঝিদের। ফলে তাদের মুখেও হাসি ফুটেছে। দেখা যায় কেউ কেউ আবার গোসলের জন্য পানিতে লাফ দিচ্ছেন। সঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় জলজ অনেক উদ্ভিদ। বিশেষ করে পর্যটকরা এখানে আসেন শেষ বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে। সূর্যাস্তের সময় এলাকাটি হয়ে ওঠে আরও নয়নাভিরাম।


জুড়ীর রাতারগুলে ঘুরতে এসেছিলেন মেহেদী হাসান মারুফ। তিনি বলেন, ‘রাতারগুল খ্যাত জুড়ীর এই এলাকাটি অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম প্রাকৃতিক একটি পরিবেশ। বর্ষার সময় এই এলাকাটি অনেকটা রাতারগুলের মতো। হাকালুকি হাওর থাকায় সূর্যাস্তটাও দারুণ উপভোগ করা যায়।’

আরেক পর্যটক আরাফাত জামান বলেন, ‘স্রষ্টার দেওয়া অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত এই জায়গাটি। নিরিবিলি হিজল-করচের মন মাতানো আঙিনা। আমরা মোট ১২ জন এখানে এসেছি ঘুরতে। ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে পরিবেশটা অবলোকন করেছি। তবে এখানে ঝড়-তুফানের কবল থেকে নিরাপদে থাকতে হবে।’


জুড়ীর ফুলতলা ইউনিয়নের মো. আফিফুর রহমান আফিফ ফেসবুকে দেখে এবং অনেকের কাছ থেকে শুনে এসেছেন এখানকার দৃশ্য উপভোগ করতে। তিনি বলেন, ‘এখানে পর্যটকরা এলে এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হতে বাধ্য। বর্ষাকালে এর আসল রূপ ফুটে ওঠে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এলাকার এই অংশটিকে যদি তত্ত্বাবধান করে পর্যটনবান্ধব এলাকা হিসেবে রূপান্তর করতে পারে, তাহলে এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবছর এই পর্যটন শিল্প থেকে সরকার বাড়তি আয় করতে পারবে বলে আমি মনে করি।’

জুড়ী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাশ বলেন, ‘হাকালুকি হচ্ছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর। এখানে প্রতিবছরই প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসেন। হাকালুকির একটা অংশ স্থানীয় খাকটেখা এলাকার জলার বন নামক জায়গাটি দেখতে অনেকটা সিলেটের রাতারগুলের মতো। এখানেও প্রচুর পর্যটকদের সমাগম ঘটছে। এখানে যদি পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেলের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে পর্যটকরা এসে থাকতে পারবেন। ফরেস্টের যে জায়গা আছে সেখানে একটি রেস্ট হাউজও করা যেতে পারে। তাহলে ভ্রমণপিপাসু মানুষ হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।’


কিভাবে যাবেন :
ঢাকা বা সিলেট থেকে বিয়ানীবাজারগামী যেকোনো বাসে উঠে চলে আসতে পারেন জুড়ীতে। ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি ও আবদুল্লাহপুর বাস টার্মিনাল থেকে বিয়ানীবাজারগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়। গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলী ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে। এগুলোর জুড়ী পর্যন্ত ভাড়া সাধারণত ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এরপর জুড়ী বাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে খাকটেখায় যাওয়া যাবে। ভাড়া সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবেন কাঙ্খিত জায়গায়।