শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে ৫ আমল



বিজ্ঞাপন

শায়খ আহমাদুল্লাহ :: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বাংলাদেশেও তিনজন আক্রান্ত হওয়ায় গোটা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় পাঁচটি পরামর্শ বা আমলের কথা তুলে ধরছি। এগুলো মেনে চলতে পারলে ইনশাল্লাহ করোনা থেকে মুক্ত ও সুরক্ষিত থাকা যাবে।


পাঁচবার অজু করা করোনা থেকে বাঁচতে চিকিৎকরা ঘন ঘন দুই হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কোনো কোনো চিকিৎসক সময় বেঁধে দিয়ে বলছেন, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় ধরে যেন হাত ধোয়া হয়। অনেকে আঙুলের চিপাও ধোয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। মুসলমানদের প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ পড়ার জন্য অজু করতে হয়। প্রিয় নবী (সা.) প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য নতুন অজু এবং উত্তমরূপে অজু করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদিসে এরশাদ করেছেন, ‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে তাদের প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য (নতুন) অজু করার নির্দেশ দিতাম।’

প্রতিবার অজুতে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করতে হয় এবং আঙুলের ফাঁকা ও নখের চিপায়ও উত্তমরূপে ঘষে অজু করতে হয়। কেউ যদি সুন্নাত তরিকা অনুযায়ী অজু করে তাহলে তাকে অজুর শুরুতেই দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ২০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে ধৌত করতে হয়। সুতরাং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় উত্তমরূপে অজু করলে আমরা করোনাভাইরাসের আক্রমণ ও সংক্রমণ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সুরক্ষিত থাকতে পারব ইনশাআল্লাহ।

বেশি বেশি দোয়া করা
করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চার ধরনের দোয়ার কথা বলব; যা আমরা নিয়মিত পড়তে পারি। প্রথমত, খুব বেশি বেশি এ দোয়াটি পড়া ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুজামি, ওয়া মিন সায়্যিইল আসকাম’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শে^ত, মস্তিষ্কবিকৃতি, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’ সুনানে আবু দাঊদে হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, কঠিন রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য নবীজি (সা.) এ দোয়াটি পড়তেন। তাই আমরা সকাল-সন্ধ্যা, উঠতে-বসতে সবসময় দোয়াটি পড়তে থাকব। এমনকি বিনা অজুতেও এটি আমরা পড়তে পারব।


দ্বিতীয়ত, সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ্য বেশ কিছু দোয়া আছে, যেগুলো বান্দাকে আল্লাহর কাছ থেকে সুরক্ষা এনে দেয়। যেমন তিন কুল পাঠ করা। আবু দাঊদে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস (কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ…), সুরা ফালাক, সুরা নাস প্রত্যেকটি তিনবার করে পাঠ করবে তবে তা পাঠকারীর জন্য সবকিছুর ক্ষতি থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে। সকাল-সন্ধ্যায় এমন আরও অনেক দোয়ার কথা বর্ণিত আছে, সেগুলো নিয়মিত পাঠ করা উচিত।

তৃতীয়ত, প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া। তিরমিজি ও আবু দাঊদে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় বলবে ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, ওয়ালা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, অর্থাৎ, ‘আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে ফেরা এবং পুণ্য করা সম্ভব নয়’Ñ তাকে বলা হয়, তোমাকে সঠিক পথ দেওয়া হলো, তোমাকে যথেষ্টতা দান করা হলো এবং তোমার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হলো। আর শয়তান তার নিকট থেকে দূরে সরে যায়।

চতুর্থত, বাসা থেকে বের হয়ে কোথাও গেলে এ দোয়াটি পাঠ করতে হবে। দোয়াটি হলো ‘আউজু-বি-কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক’ অর্থাৎ, ‘আমি আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের উসিলায়; তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, সেসবের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, কোথাও গিয়ে এ দোয়া পড়লে আপনি সেখানে যতক্ষণ থাকবেন ওই জায়গার কোনো ক্ষতিকর কিছু আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।


সতর্কতা গ্রহণ করা
চিকিৎসকরা যেসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন, সেসব অবলম্বন করা। যেমন মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, ভিড় ও জনসমাগম এড়িয়ে চলা, যত্রতত্র হাঁচি-কাশি না দেওয়া ইত্যাদি। এমন সতর্কতামূলক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রিয় নবীর সুন্নত। সহিহ বুখারির বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি সকালে সাতটি আজওয়া (বিশেষ জাতের) খেজুর খায়, তাকে বিষাক্ত কোনো কিছু বা জাদুটোনা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি : ৫৪৪৫; মুসলিম : ২০৪৭)
ওই হাদিস থেকে প্রমাণ হয়, অসুখ হওয়ার আগ থেকেই সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা সুন্নাহ। তাই চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন সেসব মেনে চলতে হবে। সামর্থ্য থাকলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সাতটি আজওয়া খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

তওবা ও ইস্তেগফার পড়া
বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার পড়া। অনেক সময় আমাদের গুনাহের ব্যাপকতার কারণে বিভিন্ন বিপদাপদের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি এবং সতর্কবার্তা এসে থাকে। ইবনে মাজায় বর্ণিত হাদিস থেকে বুঝা যায়, অশ্লীলতা বেপর্দা নগ্নতা বৃদ্ধি পেলে সেখানে মহামারী এসে থাকে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ কখনই তাদের ওপর আজাব নাজিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তা ছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের ওপর আজাব দেবেন না।’ (সুরা আনফাল : ৩৩) এ আয়াত থেকে স্পষ্ট, আল্লাহর আজাব থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় দুটি। এক, নবীর উপস্থিতি। দুই, ইস্তেগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা। আজ আমাদের মাঝে আল্লাহর নবী নাই। সুতরাং করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে হবে। নিজ নিজ অপরাধ থেকে তওবা করে আল্লাহর নির্দেশের পথে ফিরে আসতে হবে।


আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা
আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। আল্লাহ বলেছেন, ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান।’ (সুরা তালাক : ৩)। সুতরাং আপনি যদি আতঙ্কিত ও অস্থির না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখেন তাহলে ইনশাআল্লাহ সুরক্ষিত থাকবেন। একজন মুসলিম কোনো অবস্থাতেই নিরাশ হতে পারেন না। নৈরাশ্য তো কাফের ও অবিশ^াসীদের বৈশিষ্ট্য! আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে থাকে একমাত্র কাফের সম্প্রদায়।’ (সুরা ইউসুফ : ৮৭)। অথচ আজ আমরা করোনাভাইরাসে এতটা আতঙ্কিত ও ভীত হয়ে পড়েছি যে আল্লাহকেও এত পরিমাণ ভয় করি না! আমরা করোনাকে ভয় করছি অথচ করোনার সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করছি না! মৃত্যু তো হবেই। তাই কিসে আমার মৃত্যু হলো তার চেয়ে বড় কথা হলো আল্লাহর সামনে আমি কী নিয়ে যাচ্ছি! কী নিয়ে দাঁড়াচ্ছি! সুতরাং আসুন আমরা আতঙ্কিত না হই, অস্থির না হই। আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখি। তাহলে এসব ভাইরাস মহামারী থেকে আল্লাহ আমাদের সুরক্ষিত রাখবেন।

লেখক: খতিব, ভূমিপল্লী জামে মসজিদ সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।