শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

কেউ বুঝলো না হবিগঞ্জের ‘সুতাং’র দুঃখ!
খবর: ডেইলি বাংলাদেশ

খবর: ডেইলি বাংলাদেশ



বিজ্ঞাপন

হবিগঞ্জের সুতাং নদী। একটা সময় ছিল এর বুকে পাল তুলে বিচরণ করতো বড় বড় নৌকা। এতে জাল ফেললেই ধরা পড়ত ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট বড় দেশীয় সব প্রজাতির মাছ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন মৃত প্রায় সেই নদীটি। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করার পাশাপাশি শিল্পনগরীর ক্রমাগত বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে নদীটি এখন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হবিগঞ্জবাসীর দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাষাবাদে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল।


এছাড়া নদীর পানি ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। সুতাং নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তসীমান্ত নদী। এর দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৬ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। সুতাং নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে জেলার চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর লাখাই উপজেলা দিয়ে কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে জেলার অলিপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক কারখানা। কারখানাগুলোতে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ব্যবহার করা কথা থাকলেও বেশির ভাগ কারখানায়ই তা মানছে না। আবার যে কয়েকটি কারখানায় ইটিপি রয়েছে তা নামে মাত্র। অতিরিক্ত খরচের ভয়ে নিয়মিত চালানো হচ্ছে না ইটিপি। ফলে পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে তারা। কারখানাগুলোর ক্রমাগত বর্জ্যই এখন কাল হয়েছে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের।

অপরদিকে, নদীতীরবর্তী বুল্লা, করাব, লুকড়া, নূরপুর, রাজিউড়াসহ বেশকটি ইউপির গ্রামগুলোতে কৃষি, স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষকরা জানান, সুতাং নদীর পানি ব্যবহার করে লাখাই উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বোরো জমি চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু এখন নদীর পানি ব্যবহার তো দূরের কথা নদীর পাড়েও যাওয়া যায় না দুর্গন্ধের কারণে। গরু, ছাগল, হাস মুরগি নদীর পানিতে নামলে মারা যাচ্ছে। মানুষের শরীরে লাগলে হচ্ছে চর্ম রোগ। সীমাহীন ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। এছাড়া বোরো জমিগুলো চাষ করতে এখন নিতে হচ্ছে বিকল্প ব্যবস্থা। গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উঠিয়ে চাষ করতে হচ্ছে জমি। ফলে বাড়ছে কৃষকদের বাড়তি খরচ।


স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, একটা সময় ছিল যখন নদী থেকে সরাসরি পানি তুলে আমরা কৃষি জমিতে ব্যবহার করতে পারতাম। কিন্তু এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। নদীর পানি আর পানি নেই। কালো রং ধারণ করে বিষাক্ত বর্জ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে গভীর নলকূপ স্থাপন করে জমিতে আবাদ করতে হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন খরচ বাড়ছে অন্যদিকে আবার কেউ কেউ কৃষি জমি করার প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

আব্দুর রহমান নামে অপর আরেক ব্যক্তি জানান, সুতাং নদীটি এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। না পারছি পানি ব্যবহার করতে, না পারছি জমি ছেড়ে দিতে। প্রশাসন যদি নদীটি ড্রেজিং করতো তা হলে হয়তো কিছুটা হলেও নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরত। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই এর জন্য দায়ি করেন তিনি।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মোতাচ্ছিরুল ইসলাম বলেন, বারবার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নদীতে বর্জ্য না ফেলার জন্য আলাপ আলোচনা করেছি। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে উদাসীন। প্রশাসন যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তা হলে নদীটির এমন অবস্থা হতো না। তাই এ বিষয়ে এখনই প্রশাসনের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ উচিত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জুল সোহেল বলেন, অলিপুর এলাকায় প্রাণ-আরএফএল ও স্কয়ার কোম্পানিসহ বেশ কিছু কোম্পানির বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে সুতাং নদী। কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার নামে শৈলজুড়া নামক খালটি জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালে পুনঃখনন করে প্রাণ-আরএফএল ও স্কয়ার কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে ওই কোম্পানিগুলোর বর্জ্য সহজেই খালের মাধ্যমে সুতাং নদীতে ছাড়া হচ্ছে। যে কারণে শিল্পবর্জ্য দূষণে সুতাং নদীটি হয়ে পড়েছে মৎস্যশূন্য। নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। মারা যাচ্ছে হাঁস-মোরগ-গবাদিপশু। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে চর্মরোগসহ নানা রোগে। মাঠে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।


ডিসি মো কামরুল হাসান বলেন, নদীতে বর্জ্য না ফেলার বিষয়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ফের যদি নদীতে বর্জ্য ফেলা হয় তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া নদীটি বাঁচিয়ে রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।