বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
বিশেষ প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের মৌলভীবাজারে পঞ্চাশ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মনু ও ধলাই নদ এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ১০০, ধলাই নদের পানি ২৪ এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এসব নদ-নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে এবং পানি উপচে বাঁধের ভেতরে প্রবেশ করায় সদর উপজেলাসহ, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, সড়ক ও ফসলি জমি। দুর্গতদের দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, কমলগঞ্জের রহিমপুর ইউপির বিষ্ণুপুর গ্রামে ধলাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এর আগে কমলগঞ্জ পৌরসভার রামপাশায় এবং আমদপুর ইউপির ঘোড়ামারায় নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছিলো। সেই ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে রামপাশা, হকতিয়ারখোলা, ঘোড়ামারাসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।

আশ্রয় কেন্দ্রগুলো হলো শেরপুর আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয়, হামোরকোনা মাদরাসা ও ব্রাহ্মণগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই তিন আশ্রয় কেন্দ্র ২২০ পরিবার রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত ডিসি মোহাম্মদ আফরাফুল আলম খান বলেন, মৌলভীবাজারের ১০ টি ইউপির ৭০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং চার হাজার পাঁচশ জন পানিবন্দি আছেন। জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। আমরা বন্যা মোকাবিলার জন্য নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছি। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য আমাদের কাছে ৭০ হাজার প্যাকেট ট্যাবলেট আছে। রাজনগরে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং কমলগঞ্জে দুইটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মোট সাত আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মাঝে ৩৬ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।


শেরপুরে দুটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মৌলভীবাজারে আমাদের ৪২৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। জি আর চাল এবং এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ আছে। জি আর ক্যাশ আছে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা। কমলগঞ্জে সাত মেট্রিক টন চাল এবং দুইশ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেছি। কুলাউড়ায় পাঁচ মেট্রিক টন চাল এবং একশ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেছি। রাজনগরে পাঁচ মেট্রিকটন চাল এবং ১০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ত্রাণ সহায়তা হিসেবে প্রদান করেছি। এই পর্যন্ত মোট ২১ মেট্রিক টন চাল এবং এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ত্রাণ সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। মৌলভীবাজারে আমাদের খাদ্যশস্য মজুদ আছে ৪২৯ মেট্রিক টন। এছাড়া ধলাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে রহিমপুর ইউপির প্রতাপী, জগন্নাথপুর, জগনশালাসহ কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করে। কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়ে খলিলপুর ইউপির প্রায় তিনশ পরিবার পানিবন্দী আছে।


শ্রীমঙ্গলের বিলাসপারে পাহাড়ি ঢলে ছড়ার পানিতে পাঁচ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। এদিকে রাজনগরের ফতেহপুর, উত্তরভাগ ও কামারচাক ইউপি কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানিতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

জেলার শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, জেলায় ১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে এবং পানিবন্দী অবস্থায় আছে। জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী লৎফুল বারী জানান ৯৭ হেক্টর আউশ ফসল এবং ৩৮টি বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ২৩টি পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।


মৌলভীবাজার জেলার সির্ভিল সার্জন মো. শাহজাহান কবির চৌধুরি বলেন, মৌলভীবাজারে ৭৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো মাঠে কাজ করছে বলে জানান তিনি।