মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

যুক্তরাজ্যে ৫ম ‘ভিজিট মাই মস্ক’ দিবস পালিত: অর্ধ লক্ষ অমুসলিমের সমাগম
লন্ডন প্রতিবেদক

লন্ডন প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

বিপুল সংখ্যক নন-মুসলিমের অংশগ্রহণে যুক্তরাজ্যে পঞ্চমবারের মতো পালিত হলো ‘ভিজিট মাই মস্ক’ কর্মসূচি। ৩ ফেব্রুয়ারি রোববার যুক্তরাজ্যের আড়াইশ মসজিদ নন-মুসলিম নারী পুরুষ ও শিশু কিশোরদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদে ছিলো নন মুসলিমদের ভীড়। সারাদিনই দলেদলে আসতে থাকেন খৃস্টান, ইহুদীসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ। তাঁরা মসজিদটি ঘুরে দেখেন। মসজিদ যে উপসনার স্থান, এখানে গোপনীয় কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়না- এ ধরনেরই একটি স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে ফিরে যান তারা।

অন্যান্য মসজিদের মতো ইস্ট লন্ডন মসজিদ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা ছিলো। এলএমসি’র গ্রাউন্ড ফ্লোরে দুপুর ১টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় মিডিয়া লঞ্চিং। মসজিদের ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান এর পরিচালনায় মিডিয়া লঞ্চিংয়ে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেথনাল গ্রীন ও বো আসনের এমপি রুশনারা আলী, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, লিবারেল ডেমোক্রেট দলের লন্ডন মেয়র প্রার্থী সিভন বিনিটা, জেরুসালেম থেকে আগত বিশিষ্ট ইহুদী পণ্ডিত বেন আব্রাহামসন ও রেবেকা আব্রাহামসন।

ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম শায়খ মোহাম্মদ মাহমুদ-এর কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মসজিদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি মাসউদ আহমদ, মসজিদের সেক্রেটারি আইয়ূব খান এবং ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম।

রুশনারা আলী এমপি পাঁচ বছর ধরে ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচি আয়োজনের জন্য মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যসহ গোটা বিশ্ব দেখতে পারবে যে ইসলাম সবসময়ই শান্তি ও ঐক্যের ধর্ম। কিছু মানুষ আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়, আমাদের ধর্মকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। সুতরাং আমরা যে যে ধর্মে বিশ্বাসী হইনা কেন আমাদের উচিত দেশব্যাপী শান্তির বানী ছড়িয়ে দেয়া। এটা ধর্মে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সকলেরই দায়িত্ব। ইসলাম সম্পর্কে মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধে সারাদেশে মসজিদ ও ইসলামি কমিউনিটির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে।

নন-মুসলিম পুরুষ-মহিলাদের ইস্ট লন্ডন মসজিদের ভেতর ঘুরে দেখাচ্ছেন মসজিদের ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান

মেয়র জন বিগস বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসে অধিকসংখ্যক মুসলিমের বসবাস। কাউন্সিল কেবিনেটেও অধিকসংখ্যক মুসলিম কাউন্সিলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি সকলকে সাথে নিয়েই কাউন্সিলের বাসিন্দাদের জন্য কাজ করছেন। টাওয়ার হ্যামলেটসের বহুধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি রক্ষায় মেয়র হিসবে তিনি সবসময় সচেষ্ট আছেন। বিশেষকরে মুসলিম কমিউনিটির ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় তিনি সচেষ্ট।মেয়র প্রার্থী সিভন বিনিটা বলেন, ভিজিট মাই মস্ক মুসলিম-ননমুসলিম পরস্পর পরস্পরকে জানার একটি বড় প্লাটফর্ম। আমি আশাবাদী, বহুসাংস্কৃতিক বৃটেনে বহুধর্মের মানুষের মধ্যে একটি সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে এই কর্মসূচি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করবে।

ইহুদী পণ্ডিত বেন আব্রাহামসন বলেন, এই মসজিদ ছোট থেকে দিন দিন বড় হয়ে আজকের বিশাল মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছে। মসজিদের পাশে একটি সিনাগগ ভবন ছিলো। সিনাগগ কর্তৃপক্ষের সাথে মসজিদ কমিটির সম্পর্ক ছিলো অভূতপুর্ব। মসজিদের ভবনগুলো উচু হলেও তাঁরা সবসময়ই নিশ্চিত করেছেন সিনাগগ ভবনটি যেন অন্ধকার হয়ে না যায়। দিনের বেলা যেন আলো আসে। ইসলামে অন্যধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, মসজিদের কার্যক্রম সম্পর্কে নন মুসলিমরা বেশ কিছু জানেন না। তাই তাঁরা অনেক সময় মিডিয়ার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন। ভিজিট মাই মস্ক হচ্ছে এমন একটি কর্মসূচি যা নন-মুসলিমদের মধ্যকার বিভ্রান্তি দূর করতে পারে। ওইদিন মসজিদগুলো তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তাই ননমুসলিমরা জানতে পারেন মসজিদের প্রকৃত কাজ কী। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী আজকে যারা মসজিদ পরিদর্শনে আসবেন তাঁরা ইসলাম সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।

ইস্ট লন্ডন মসজিদের সেক্রেটারি আইয়ূব খান বলেন, ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচির মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম, মুসলমান ও মসজিদ সম্পর্কে অমুসলিমদের মধ্যে সৃষ্ট ভুলবুঝাবুঝি দূর করা। গত চার বছরের আয়োজন সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যথেষ্ট সফল হয়েছে বলে মনে করি। তিনি বলেন, এই কর্মসূচি পরস্পর পরস্পরকে জানাশোনার একটি উপযুক্ত প্লাটফর্ম। আমরা একজন আরেকজন সম্পর্কে যতবেশি জানতে পারবো, তত বেশি আমাদের পারস্পারিক সম্পর্কের উন্নতি হবে।

মারিয়াম সেন্টারের প্রথমতলার ননমুসলিম ভিজিটিং সেন্টার থেকে শেতাঙ্গ অমুসলিম পুরুষ-মহিলারা জামাতে নামাজ পড়ার দৃশ্য দেখছেন

ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচির উদ্যোক্তা মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল সেক্রেটারি মাসউদ আহমদ জানান, এ বছরের কর্মসূচিতে হাজার হাজার মুসলিম-অমুসলিম অংশগ্রহণ করেছেন। শুধু লিংকনশায়ারের একটি মসজিদে ৭ শতাধিক মানুষের সমাগম ঘটেছে। তিনি আরো জানান, বৃটেনে সতেরো শ’র বেশি মসজিদ রয়েছে। এরমধ্যে ৫শ মসজিদ এমসিবির সাথে সম্পৃক্ত। এ বছর তাঁরা আড়াইশ মসজিদকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছেন। পর্যায়ক্রমে সকল সদস্য-মসজিদকেই ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ কঠিন কোনো বিষয় নয়। আমরা প্রদর্শনীর জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং, মেটেরিয়াল ও ভলান্টিয়ার প্রদানসহ অন্যান্য সবধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। শুধু চাই মসজিদগুলো অমুসলিম প্রতিবেশীর জন্য একটি দিনের জন্য খুলে দেয়া হোক।

উল্লেখ্য, অপেন ডে উপলক্ষে এলএমসি’র নিচতলায় মসজিদ, ইসলাম ও মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনী হল থেকে ২০ মিনিট পর পর একজন সুদক্ষ গাইডের তদারকিতে একটি করে গ্রুপ মসজিদের ভেতরে মেইন হলে নিয়ে যাওয়া হয়। ভেতরে নিয়ে গিয়ে মুল মসজিদ, ভিজিটিং সেন্টার ও অজুখানা দেখানো হয়। এ এসময় নন মুসলিমদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ইমাম ও গাইডগন। আগতরা দেখতে পারেন মুসলমনরা কীভাবে নামাজ পড়েন, নামাজের আগে কীভাবে অজু করতে হয়। এসময় ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে তাদের মধ্যে বেশ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

জোহর ও আসরের নামাজের সময় মারিয়াম সেন্টারে অবস্থিত নন-মুসলিম ভিজিটিং সেন্টার খুলে দেয়া হয়। আগতরা সেখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার দৃশ্য অবলোকন করেন। মাথায় ওড়না পরে অত্যন্ত মার্জিত পোশাকে নারীরা মসজিদ ঘুরে দেখেন।

২০১৫ সালে মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন (এমসিবি) ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচির উদ্বোধন করে। প্রথম বছরই নন-মুসলিমদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। প্রথম বছর যুক্তরাজ্যের ২০টি মসজিদ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। পরের বছর দ্বিতীয় অপেন ডে’তে অংশগ্রহণ করে ৮০টি মসজিদ। তৃতীয়বারের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে দেড়-শতাধিক মসজিদ। চতুর্থ বছর অংশগ্রহণ করে প্রায় ২ শতাধিক মসজিদ। আর এবারের পঞ্চম ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচিতে সারাদেশে আড়াইশ মসজিদ মুসলিম-ননমুসলিমদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সারাদিনে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ মসজিদগুলো ঘুরে দেখেন।