শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

নির্বাচনের কথা এখনই ভাবছেন না লুৎফুর, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান
লন্ডন প্রতিবেদক

লন্ডন প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে মেয়র পদ হারিয়েছিলেন লুৎফুর রহমান। পাঁচ বছরের জন্য তাঁকে নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। আইনজীবী হিসেবে কাজ করারও অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। কিন্তু সেই রায়ের প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড রিপোর্ট দিলো লুৎফুর রহমান নির্দোষ। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধের কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। মেট পুলিশ দেড় মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে এক বছর তদন্ত শেষে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করে।

আর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের রিপোর্টের আড়াই মাসের মাথায় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল নিয়োগকৃত স্বাধীন তদন্ত সংস্থাও তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা দিয়ে তদন্ত বন্ধ করে দিলো। তাই এখন লুৎফুর রহমান ফের আলোচনা উঠে এসেছেন। অনেকেই মনে করেন, লুৎফুর রহমানের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কি তাঁর মানসম্মান ও আর্থিক ক্ষতি ফিরে পাবেন। জনমনে প্রশ্ন তিনি কি আগামীতে নির্বাচনে দাঁড়াবেন?

এ ব্যাপারে লুৎফুর রহমানের একজন মুখপাত্র বলেন, তিনি এখনই নির্বাচনে দাঁড়ানো কিংবা না দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন না। সময়ই বলে দেবে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন কি-না। এখন তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান। ওই মুখপাত্র আরো বলেন, লুৎফুর রহমান শুরু থেকেই বলে আসছেন তিনি কোনো অনিয়ম করেননি। তিনি মনে করতেন, একদিন সত্য উদ্ভাসিত হবে। আজ সেই সত্য বেরিয়ে আসছে। সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। তিনি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ও কাউন্সিলের স্বাধীন তদন্ত সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, নিরপেক্ষভাবে একটি তদন্ত রিপোর্ট তুলে ধরার জন্য।

উল্লেখ্য, লুতফুর রহমানের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও ট্যাক্স পেয়ারদের অর্থের অপব্যবহারের কোনও প্রমাণ পায়নি কাউন্সিল নিয়োগকৃত স্বাধীন তদন্ত দল। এর ফলে গত ২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ঘোষনা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল।

২০১৫ সালের মেয়র নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে মেয়রের পদ হতে লুৎফুর রহমানকে অপসারণের পর ‘ক্লিয়ার আপ প্রজেক্ট’ এর আওতায় মোটা অংকের অর্থ ব্যয়ে এ তদন্ত শুরু করেছিলো টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। তদন্তকারীরা ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত লুতফুর রহমানের দায়িত্বকালে কাউন্সিলের ইয়ুথ সার্ভিস, অনুদান ও হিউম্যান রিসোর্স বিভাগে তদন্ত পরিচালনা করেন। ২০ ডিসেম্বর কাউন্সিলের মুখপাত্র এ তদন্ত বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবারের বৈঠকে এই প্রকল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে সেপ্টেম্বরে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে জালিয়াতির এমন কোনও সুত্র তারা খুঁজে পায়নি। প্রায় দেড় মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড উপসংহারে পৌঁছায় যে, লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিচার করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি পুলিশ। ফলে নির্বাচনী আদালত দুর্নীতি ও বেআইনি চর্চার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করলেও তার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজাদারি অভিযোগ আনা হয়নি। ২০১০ সালে বারার ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন লুতফুর রহমান। শৈশবে মা-বাবার সঙ্গে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে আসেন ও লন্ডনে

স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর পরিবার লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস অঞ্চলের বাসিন্দা। লুতফুর রহমান বো অঞ্চলের ম্যানর প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা করেন। স্কুল শেষ করার পর তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন এবং পাস করে আইন পেশায় যুক্ত হন। পরে তিনি সক্রিয় হন রাজনীতিতে। দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৫ সালে নির্বাচনী কোর্টের রায়ে বরখাস্ত হন সাবেক মেয়র লুতফুর রহমান। মামলার রায়ে নিলাম হয় বাড়ি। ওই সময় তাকে বরখাস্ত করা হলেও তার বিরুদ্ধে সাজা দেয়নি কোর্ট। কোর্টের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণে তদন্তে নামে পুলিশ।