শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

সিলেটের ১৯টি আসনে ভোটযুদ্ধে একাধিক প্রার্থী: দুই জোট থেকে কে লড়ছেন কার সঙ্গে?



বিজ্ঞাপন

দেলোয়ার হোসাইন:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আলোচনা এখন তুঙ্গে। দেশজুড়ে বাজছে নির্বাচনী ডামাঢোল। বড় দুই দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর থেকেই অপেক্ষা ছিল কোন আসনে কে পাচ্ছেন দলীয় টিকিট। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। গত ২৫ নভেম্বর রোববার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়াইর জন্য চূড়ান্ত প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের কাছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত চিঠি হস্তান্তর করা হয়। তবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অনেক আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে গত ২৬ নভেম্বর সোমবার থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু করে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানের খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে পরদির মঙ্গলবারও মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তর করা হয়। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করলেও কৌশলগত কারণে অনেক আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দিয়েছে বিএনপি।

সারাদেশের মতো সিলেটেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে দুই বড় দল নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী নিশ্চিত হলেও কোনো কোনো আসনে একাধিক আবার কোনো কোনো আসনে দলীয় বা জোটের প্রার্থীর নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে এই আসনগুলো জোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আবার কৌশলগত কারণে এক আসনে একাধিক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে বলে গেছে। নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এদিকে গত ২৮ নভেম্বর বুধবার (শেষ দিন) প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে কে লড়ছেন কার সঙ্গে:

সিলেট-১ (সদর-সিটি কর্পোরেশন) আসন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এক ধরনের ‘মিথ’ প্রচলিত আছে। এ আসনে যে দল বিজয়ী হয় সেই দলই সরকার গঠন করে বলে বিশ্বাস অনেকের। এবার এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি একে আবদুল মোমেন। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী এবং বিএনপির সাবেক দুইবারের সাংসদ খন্দকার আবদুল মালিকের পুত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। বিএনপির এই শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে কে লড়বেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন, অপরজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে কে হচ্ছেন ‘ধানের শীষের কান্ডারি’ তা জানার জন্য প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে এখনো দলীয় কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে মহাজোটের হয়ে এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারীরা এক হয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য, নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। এ আসেন প্রথমবারের মতো কোনো নারী প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। এবার তিনি মনোনয় পাবেন কি-না এ নিয়ে শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত গুঞ্জন ছিলো। দলের ভেতরেই চাপে ছিলেন এই সাংসদ। জাতীয় পার্টিও দাবি করছিলো এ আসন। অন্যদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ও নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ হক এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত এই চার প্রার্থীর মধ্যে ভোটের মাঠে কে লড়ছেন- তা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিম এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। তবে শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন দলীয় টিকিট এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন নেতাকর্মীরা।

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার। তার একদিন পর গত ২৬ নভেম্বর সোমবার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান এ আসনের বর্তমান সাংসদ সেলিম উদ্দিন। সারাদেশে প্রায় ৭০টি আসন রেখে দেওয়া হয় আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকদের জন্য। যে আসনগুলোতে নিজেদের প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। আর সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেওয়ার পরও এ আসনে নিজেদের আলাদা প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। মহাজোট থেকে দু’জনই মনোনয়ন পাওয়ায় ভোটারদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- এ আসনে এবার কে হচ্ছেন মহাজোটের প্রার্থী? অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন ও ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সাবেক এমপি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ আসন ২০ দলীয় (বর্তমানে ২৩ দল) জোটের শরিক দল জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া হবে। জোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এদিকে আওয়ামী লীগের সাথে বিকল্পধারার জোট আর শমসের মবিন চৌধুরীর বিকল্পধারায় যোগদানের ব্যাপারে শঙ্কায় ছিলেন নেতাকর্মীরা। তবে দলবদল করেও শেষ পর্যন্ত মহাজোটের মনোনয়ন না পেয়ে নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন শমসের মবিন চৌধুরী। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাই এ আসনে বিদ্রোহের কবলে পড়তে পারে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন ২০ দলীয় জোটের নেতা ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বারাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রকিব। এ আসনে ২০ দলীয় জোটের নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। তাই সব মিলিয়ে এ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে। তবে শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের হাবিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।

মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনবারের নির্বাচিত এমপি ও জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দু’জন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু দুজনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র হাতে পেয়েছেন। দুই প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় সরব তাদের সমর্থকরা। এ নিয়ে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কে পাচ্ছেন দলীয় টিকিট তা নিয়ে এলাকায় আলোচনার ঝড় বইছে।

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে দলীয় কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবারও আসনটি মহাজোটের শরিক দল বিকল্পধারাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী জোট থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য বিকল্পধারায় যোগ দেওয়া সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা এমএম শাহীন। অন্যদিকে এ আসনে দলীয় কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি নবাব আলী আববাস খান ধানের শীষের প্রার্থী সুলতান মোঃ মনসুরের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

মৌলভীবাজার-৩ (সদর উপজেলা-রাজনগর) আসনে বর্তমান এমপি প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্ত্রী সায়রা মহসিনের পরিবর্তে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ। অন্যদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছে প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান।

মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান ও টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) ও তাঁর ছেলে মুহিত আশিক চিশতী। হাজী মুজিবের বিরুদ্ধে ৭৬টি মামলা আছে, এর মধ্যে অনেক মামলা খারিজ হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। তাই কৌশলগত কারণে বিকল্প হিসেবে তাঁর ছেলে মুহিত আশিক চিশতীকেও মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দুই বারের দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। অন্যদিকে বিএনপির তিনজনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন- সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল।

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তর স্ত্রী বর্তমান সাংসদ জয়া সেনগুপ্ত। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল।

সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। অন্যদিকে এ আসনে এখনও কাউকে মনোনয়নের চিঠি দেয়নি বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, এ আসনটি জোটের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, এ আসনে গণফোরাম নেতা যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোঃ নজরুল ইসলাম নির্বাচন করবেন। তবে ২০ দলীয় (বর্তমানে ২৩ দল) জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা সাবেক সাংসদ মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীও মনোনয়ন পেতে পারেন।

সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এ আসনের বর্তমান সাংসদ মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুল হক আসপিয়া এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন।

সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। তাছাড়া এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একসময়ের উচ্চপদস্ত শিক্ষাকর্মকর্তা ও কাউন্সিলার, বর্তমানে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে অবস্থিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ‘ব্রিজ একাডেমী’র চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আইয়ূব করম আলী।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবুর পরিবর্তে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ (মিলাদ গাজী)। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জাপার কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেওয়ার পরও নিজেদের আলাদা প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। মহাজোটের হয়ে দুইজন মনোনয়ন পাওয়ায় এ আসনে এবার কে হচ্ছেন মহাজোটের চূড়ান্ত প্রার্থী- সে প্রশ্ন উঠেছে ভোটারদের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি দ্বন্দ্বে পড়েছেন দুই দলের নেতাকর্মীরা। দু’জনই নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী থাকবেন না-কি শেষ পর্যন্ত একজনকে বেছে নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন দুই দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া এবং গণফোরাম থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন অওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া। এ আসন থেকে ঐক্যফ্রন্টের নতুন চমক হিসেবে রেজা কিবরিয়া ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সাখাওয়াত হাসান জীবন। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে খ্যাত ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বর্তমানে কারাবন্দি রয়েছেন।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর-শায়েস্তাগঞ্জ-লাখাই) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মোঃ আবু জাহির। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র আলহাজ্ব জিকে গউছ ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট এনামুল হক সেলিম।

হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মাহবুব আলী। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি শিল্পপতি সৈয়দ মোঃ ফয়সল।

উল্লেখ্য, তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো ২৮ নভেম্বর বুধবার। সিলেটসহ সারাদেশে সকল দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় মনোনয়ন দাখিল করেছেন। মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ছিলো উৎসবমুখর পরিবেশ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বরের পরেই চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম জানা যাবে।