শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ



Sex Cams

                    চাইলে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন

কুলাউড়া শুধু নামেই ‘এ গ্রেড’ পৌরসভা!
বিশেষ প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিবেদক



বিজ্ঞাপন

১৯৯৬ সালে কুলাউড়াকে পৌরসভা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বি গ্রেডে চলছিলো এর কার্যক্রম। ২০১৬ সালে বর্তমান মেয়র মো. শফি আলম ইউনুছ দায়িত্বে আসার পরের বছর ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কুলাউড়াকে এ গ্রেডের পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। এরপর এক বছর কেটে গেলেও শুধুমাত্র পৌরসভা কার্যালয়কে দ্বিতল-বিশিষ্ট দালান করা ব্যতিত অন্য কোন উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছেনা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

তাছাড়া পৌর বাজেটের বিভিন্ন খাতের নির্দিষ্ট বরাদ্দ দেখানো হলেও তা খরচ হয় ভিন্ন খাতে যদিও সেই খাতগুলো অস্পষ্ট। অবশ্য পৌর কর্তৃপক্ষ দাবী করছে, বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ না হলে সেগুলো কোষাগারে জমা থাকে।

চলতি মেয়াদের নির্বাচনের আড়াই বছর পার হলেও কুলাউড়া পৌরসভায় এখনও আশানুরুপ কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলে দাবী স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের দাবী অব্যাহত করের বোঝা, লাগামহীন বিল পরিশোধ আর বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে পৌর কর্তৃপক্ষের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হলেও কেউ দেখছেনা পৌরবাসীর ভোগান্তি। শহরবাসী যে প্রত্যাশা ছিলো এ গ্রেডে উন্নীত পৌরসভা হওয়ার পর অর্থাৎ গত দেড় বছরেও পৌরবাসী সেই কাক্সিক্ষত কোন সেবা পায়নি বলে জানান অনেকে। ঘটেনি মানুষের আস্থার প্রতিফলন।

এ গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পর পৌর কর বাড়লেও কোন উন্নয়ন না হওয়ায় পৌরবাসীর মাঝে দিন-দিন হতাশা বাড়ছে। পৌরসভার কোন কোন সড়কে এখন পায়ে হাঁটাও যেন খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় পৌরবাসীরা জানান, পৌর শহরের বেশীরভাগ ড্রেনগুলো সংস্কারের অভাবে ময়লা আবর্জনায় সংকোচন হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। পানি নিষ্কাষনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় পৌর এলাকা। রাস্তাঘাট ভাঙা চোরা। বেমানান জায়গায় অস্বাস্থকর ডাস্টবিন থাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনাসহ পৌর বর্জ্য। শিশুপার্ক বা জনগনের বিনোদনের জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। নেই ব্যবহারযোগ্য কোন শৌচাগার। এ গ্রেডের পৌরসভায় সুপেয় পানীর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক থাকার কথা থাকলেও নেই এর ব্যবস্থা। চলাচলের জন্য ফুটপাথ নেই, যেটুকু আছে তা হকারদের দখলে। নামে প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত হলেও নেই কোন নাগরিক সেবা ও সুবিধা।

সরেজমিনে জানা যায়, বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পৌরসভার ধারাবাহিক বাজেটে মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও আজ অবদি এর কোন কার্যক্রম হয়নি। এ গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পর বাজেটে এর বরাদ্দ দ্বিগুন করা হলেও নেই এর কোন তৎপরতা। শুধু তাই নয় বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বা অপসারনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তার কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। পৌরসভা বাজেটে পৌর কবরস্থান সংস্কারের জন্য বরাদ্দ থাকলেও নেই পৌর কবরস্থান। নাগরিকদের সেবায় জন্ম নিবন্ধনের জন্য পৌর বাজেটে বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ টাকা অথচ প্রত্যেক নাগরিককে প্রতি নিবন্ধনের জন্য ১০০ টাকা করে দিতে হয়। খেলাধুলা ও সংস্কৃতির জন্য বরাদ্দ ৫ লক্ষ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে কিন্তু তার কোন খরচের খাত দৃশ্যমান নাই।

গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে পৌর সড়ক নির্মাণে ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও ওই সময়ে কোন রাস্তা নির্মাণ হয়নি। রাস্তা মেরামত ও সংস্কারের জন্য ৩৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও ওই সময়ে কোন কাজ হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও এর কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। ওই সময়ে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার/ ডাস্টবিন নির্মাণ/ কালভার্ট নির্মাণ বাবত ১৫ লক্ষ টাকা, ময়লা আবর্জনা মার্কেট/ বাজার/ উন্নয়ন/ কবরাস্থান/অফিস ভবনের স্থান উন্নয়ন সংস্কার বাবত ১০ লক্ষ টাকা, মৃত কুকুর অপসারণ ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের উপকরণ ক্রয় বাবত ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। পৌরবাসীর দাবি বাজেটে উল্লিখিত এসব বরাদ্দ দেখানো হলেও এর কাজ হয়েছে সিঁকি পরিমান। পৌর এলাকার রাবেয়া আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্মুখ সড়ক, দক্ষিণবাজার থেকে মনসুর পর্যন্ত সড়ক, সাদেকপুরের সড়কগুলোর অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে নাজুক হলেও সড়কগুলোর সংস্কার হচ্ছেনা।

এ বিষয়ে কুলাউড়া পৌরসভা প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান বলেন, বাজেটে উল্লেখিত বরাদ্দকৃত টাকার পরিমান সম্ভাব্য হিসাবে ধরা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এক খাতে খরচ না হলে ভিন্ন খাতে সেগুলো ব্যয় হয় নতুবা কোষাগারে জমা থাকে।

মশক নিধন, কুকুর নিধনের বরাদ্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুকুর নিধনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। আর মশা নিধনের বরাদ্দ খরচ হয়নি, সেগুলো কোষাগারে জমা আছে। এ গ্রেডের পৌরসভায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই তা বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা আছে।

এ বিষয়ে কুলাউড়া পৌর মেয়র মো. শফি আলম ইউনুছের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে গেলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।